ঢাকার চিড়িয়াখানায় একদিন!!!
ঢাকার মিরপুরে স্থাপিত বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা। এটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয় এটি। চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন। বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ দর্শনার্থী ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে থাকেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকা শহরের শাহবাগে তৎকালীন নবাবরা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার গোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে একটি চিড়িয়াখানার অভাব অনুভূত হয়। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে বর্তমান ঈদগাহ এলাকায় ৪-৫ একর জায়গা জুড়ে ছোট আকারের একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানাটিতে একটি বড় পুকুর এবং পাড়ের খানিকটা জায়গা জুড়ে একটি বলাকা প্রদর্শনী ছিল। সেখানে রাজহাঁস, পাতিহাঁস, শীতের পরিযায়ী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি ছিল। হাড়গিলা, সারস এবং ময়ূরও প্রদর্শিত হত। বানর, হনুমান আর হরিণ ছিল। সরিসৃপের মধ্যে অজগর ও কুমির ছিল প্রধান।
ঢাকায় একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন কৃষি, সহযোগিতা ও ত্রাণ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে বছর ২৬ ডিসেম্বর প্রস্তাবনাটি চুড়ান্তভাবে ঘোষিত হয়। এরপর চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনপ্রকার উদ্যোগ ছাড়াই এক দশক পার হয়ে যায়। ১৯৬১ সালের ১১ মার্চ খাদ্য ও কৃষি বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের বরাতে এক উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ পরিষদের কাজ ছিল প্রস্তাবিত চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দান। তদানীন্তন পশুপালন সার্ভিসের পরিচালক এই পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
ঢাকা চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর। চিড়িয়াখানার চত্বরে ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে।
চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। তবে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৩৮ প্রজাতির ২ হাজার ৬২২টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক । ---তথ্য উকিপিডিয়া
এখন আমি আপনাদের আমদের যাত্রা কাহিনী বলবো।
যাত্রা শুরু হয়েছিলো বাসাবো থেকে,বাসাবো থেকে বাহনে করে রওনা দিলাম মতিঝিলের পথে ওখানে শাপলা চত্বরে থামতে হবে এর পরে চিড়িয়াখানার ডিরেক্ট বাস পেয়ে গেলাম।বাসে চড়েই আমাদের যাত্রা,মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব,প্রেসক্লাব থেকে ফার্মগেট,ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১,মিরপুর-১ থেকে আমাদের গন্তব্যস্থল চিড়িয়াখানা।
সময়টা দুপুর ছিলো একদিকে তীব্র গরম আরেকদিকে পেটে খুদা,পাশেই দেখলাম অনেক হোটেল আছে সেই হোটেল থেকেই পেটপূজা করে নিলাম।মেনুতে অনেক কিছুই ছিলো,মুরগী ও গরু ১০০ টাকা,ডিম ২০ টাকা,টাকার শর্টেজ কারনে আমরা ডিম ভাত আর ডাল খেলাম। বিল আসলো ৬০ টাকা মাত্র।পেটপূজার পর চলে গেলাম কাউন্টারে,২০ টাকা করে প্রতি টিকেট।দুটি টিকেট নিলাম আমার আর পরশের জন্যে।এরপর ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলাম চিত্রা হরিণ,হলুদ বাদামী মিশ্রণে তার দেহ পেটের দিক দিয়ে সাদা,বড় বড় শিং তবে সেটা শুধু ছেলে হরিণের ক্ষেত্রে,মেয়ে হরিণদের শিং নেই।এর পর দেখলাম কয়েকটা বড় বড় সাইনবোর্ড,প্রথম সাইনবোর্ডে দর্শনার্থীদের করনীয় দিকগুলো দেয়া ছিলো। আজকাল অনেক দর্শনার্থী যেখানেই যায় সেই পরিবেশটাকে নোংরা করে ফেলে তারা যেখানে সেখানে ময়লা,উচ্চস্বরে গান ইত্যাদি উচ্ছৃঙ্খল কাজকর্ম করে থাকে যার ফলপ্রসূতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।এসব কাজকর্ম সহ প্রাণীদের বিরক্ত না করা ও কোনো খাবার না দেয়া থেকে বিনীত অনুরধ করেছে।এর পরের সাইনবোর্ডে ছিলো বিভিন্ন প্রাণীদের লিস্ট ও বিবরণ।এর পরের বোর্ডে ছিলো কোথায় কোন প্রাণী অথবা পাখি আছে।আমরা একটু হেটেই দেখতে পেলাম রেসাস বানর এ বানরগুলো ধুসর রঙের ও মাঝারি সাইজের।এদের মধ্যে একটা পারিবারিক বন্ধন রয়েছে।এদের সবচেয়ে বড় বিশিষ্ট হল এরা একে অন্যের উকুন বেছে দেয়।এর পরে দেখলাম নানা জাতের বক,একেক বক একেক রকম,একেক রকমের চাল চলন,একেক রকমের গঠন, কিছু বকের অনেক লম্বা পা আবার কিছু বকের লাল ও বাঁকা ঠোঁট।আফ্রিকান বাঘের কাছে গিয়ে হতাশগ্রস্থ হলাম,বাঘ বাঘিনী দুজনই ঘুমাচ্ছিলো,এরপরে গেলাম আফ্রিকান ও ইন্ডিয়ান সিংহের কাছে তারাও ঘুমাচ্ছিলো।তবে যতটুকু তাদের দেখেছি তাতেই আমরা খুশি, এর ফাকে পরশ কিছু ছবি তুললো ও ভিডিও করে নিলো।সামনেই দেখতে পেলাম উটপাখি,বড় বড় পা,ইয়া বড় গলা,মাথা ছোট।তবে আজব ব্যাপার হল সে এক জায়গায়ই দাড়িয়ে ছিলো,একটুও নড়াচড়া করছিলোনা।এরপরে দেখতে পেলাম গাধা,এ গাধা গুলো আফগানিস্থান,ইন্ডিয়া,আফ্রিকা ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়,এরপরে দেখলাম এক অদ্ভুত প্রাণী যার নাম "ব্লাক ওয়াইল্ড বিস্ট" এটি ঘোড়া,গরু ও মহিষের সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে।এর পরে মুখোমুখি হলাম জলহস্তী,তখন তারা সবাই মিলে তাদের প্রিয় খাদ্য ঘাস খাচ্ছিল,এরা পানি ও ডাঙায় দুই জায়গায়ই থাকে।ময়ূর কথা তো ভুলেই গেছিলাম,আমরা দেখেছি সাদা ময়ূর যা খুবই বিচিত্র এর পরে আরো কিছু ময়ূরের জাত দেখলাম ,ছেলে ময়ূরের পাখা মেলা দৃশ্য খুবই মনোরম।আমরা সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম সাদা কাক দেখে,তার সাথে ছিলো ধূসর কাক।আমরা আরো কিছু প্রাণী দেখি যেমন কেশিয়ার, এর কালো শরীর ,লাল ও নীল মাথা ও ঠোঁট,এরা কেনিয়ার বাসিন্দা এর পরে দেখলাম উটপাখির মতই ইমু তবে এরা একটু ছোট এরা অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা,আমাদের গ্রাম বাংলায় আমরা ঘুঘু দেখেছি তবে সবুজ ঘুঘু অনেকেই দেখিনি তবে ওখানে সবুজ ঘুঘু দেখে আসলাম,এদের পাখা সবুজ হয় এরা পাহাড় ও বনজঙ্গলে থাকে।
এরপরে দেখলাম সবচেয়ে আকর্ষণীও ম্যাকাও, আপনারা যারা পাইরেটের মুভিগুলো দেখেছেন সেখানে দেখবেন তাদের একটা পাখি সারাদিন হাতে থাকে সেটিই হল এই পাখি এরা খুবই ফ্রেন্ডলি,ওখানে একটা সবুজ পাখি দূরে বসে ছিলো আমদের দেখেই কাছে এসে পরেছিলো আর ক্যামেরার সামনে পোছ মারা শুরু করে দিয়েছিলো।এদের ঠোঁট বাকা ,ধূসর বর্ণের ,অনেক শক্ত, সোনালী লাল সবুজ ও নানা রঙের মিশ্রণে এদের পালক,এরা মূলত ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড,আমেরিকা ও মেক্সিকো তে দেখা যায়।
এরপরে দেখলাম ওয়াটার বাক।এরা হরিণের মতই তবে এদের দেহ বৃহৎ,তবে পা ছোট।এরা আফ্রিকাতে থাকে। এরপর দেখলাম কালো ধনেশ,ভারত মায়ানমার নেপাল ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের বড় ঠোঁট,তবে শিরস্রনের জন্য এই ধনেশ জগতখ্যাত।এদের উপরের অংশ কালো ও তলপেট সাদা।এরা মূলত দলবদ্ধভাবে থাকে।এরপরে দেখলাম ঈগলের মত পাখি যাদের গলার স্বর কর্কশ এরা সুন্দরবন ও বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব এলাকায় বিদ্যমান।এরপরে দেখলাম বাংলার পরিচিত পাখি শঙ্খচিল।এদের দেখতে সাদা ও ইটের মত লালচে আমরা বাংলার অনেক কবিতায় এই পাখির নাম পেয়ে থাকি যেমন জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় লিখেছেন "আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে" এরপরে দেখতে পেলাম তিলাবাজ যার গাড় বাদামী পালক,আরো দেখেছি গন্ডার।এদের বিরাট সরু সিং নাকের উপর,বিসাল লালচে দেহ ও শক্ত চামড়ার দেহ।একবার শুনেছিলাম এদের গায়ে কেউ মারলে নাকি তারা ৩০ দিন পর টের পায়।হাঁটতে হাঁটতে আরও চোখে পড়লো জিরাফ ও জেব্রা এরপরে হাতি সাপ ও সবশেষে কুমির।আমাদের জাতীয় পশু আমাদের বাঘ মামার কথা তো ভুলেই গেছিলাম।রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের খাঁচার সামনে যাওয়াতেই দেখি মামা গর্জন দিয়ে উঠেছে,যেমন বড় তেমন হিংশ্র,ডোরাকাটা কালো দাগই একে অন্য বাঘ থেকে আলাদা করেছে যা শুধু আমাদের সুন্দরবনেই পাওয়া যায়।দিন দিন এই বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।কিছুদিন আগে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দেশে আর মাত্র ১০৫ টি বাঘ ও ভারতের সুন্দরবনের অংশে ৭৩ টি বাঘ আছে।আমাদের উচিত আমাদের জাতীয় পশুকে বাঁচানো।
চিড়িয়াখানা ঘুরতে ঘুরতে কখন যে এক্সিট পয়েন্টে এসে পরলাম বুঝতেই পারিনি।
আমাদের এ ভ্রমণ হল আপনাদের পরিবেশ,পশু সম্পর্কে সচেতন ও ইনফরমেশন জানানোর জন্যেই।আপনারা যদি প্রকৃতিকে রক্ষা করেন তাহলে প্রকৃতিই আপনাকে রক্ষা করবে যেমন করেছিলো ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডরে। পরবর্তীতে আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো বাংলার অন্য কোনো পথে।
আসুন পরিবেশ বাঁচাই,নিজেদের বাঁচাই :)
নীচে চিড়িয়াখানার কিছু স্থির চিত্র দেয়া হল।
ছবি তুলেছেনঃআরসাদ খান পরশ
১। চিত্রা হরিণ
২।কিছু নিয়মাবলী
৩।এক নজরে কিছু তথ্য
৪।রেসাস বানর
৫।রেসাস বানরদের কিছু মুহূর্ত
৬।গোল্ডেন বক
৭।রয়্যাল বেঙ্গল(ঘুমিয়ে রয়েছে)
৮।সাদা ময়ূর
৯।কেশিয়ার
১০।ময়ূর
১১।ইমু
১২। ময়ূর
১৩।ম্যাকাও
১৪।ম্যাকাও
১৫।ম্যাকাও
১৬।ব্লাক ওয়াইল্ড বিস্ট
১৭।গাধা
১৮।ওয়াটার বাক
১৯।ধনেশ
২০। শঙ্খচিল
২১।তুরাগ নদী
২২।জলহস্তি
২৩,কুমির
২৪।কুমির
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকা শহরের শাহবাগে তৎকালীন নবাবরা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার গোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে একটি চিড়িয়াখানার অভাব অনুভূত হয়। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে বর্তমান ঈদগাহ এলাকায় ৪-৫ একর জায়গা জুড়ে ছোট আকারের একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানাটিতে একটি বড় পুকুর এবং পাড়ের খানিকটা জায়গা জুড়ে একটি বলাকা প্রদর্শনী ছিল। সেখানে রাজহাঁস, পাতিহাঁস, শীতের পরিযায়ী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি ছিল। হাড়গিলা, সারস এবং ময়ূরও প্রদর্শিত হত। বানর, হনুমান আর হরিণ ছিল। সরিসৃপের মধ্যে অজগর ও কুমির ছিল প্রধান।
ঢাকায় একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন কৃষি, সহযোগিতা ও ত্রাণ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে বছর ২৬ ডিসেম্বর প্রস্তাবনাটি চুড়ান্তভাবে ঘোষিত হয়। এরপর চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনপ্রকার উদ্যোগ ছাড়াই এক দশক পার হয়ে যায়। ১৯৬১ সালের ১১ মার্চ খাদ্য ও কৃষি বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের বরাতে এক উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ পরিষদের কাজ ছিল প্রস্তাবিত চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দান। তদানীন্তন পশুপালন সার্ভিসের পরিচালক এই পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
ঢাকা চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর। চিড়িয়াখানার চত্বরে ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে।
চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। তবে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৩৮ প্রজাতির ২ হাজার ৬২২টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক । ---তথ্য উকিপিডিয়া
এখন আমি আপনাদের আমদের যাত্রা কাহিনী বলবো।
যাত্রা শুরু হয়েছিলো বাসাবো থেকে,বাসাবো থেকে বাহনে করে রওনা দিলাম মতিঝিলের পথে ওখানে শাপলা চত্বরে থামতে হবে এর পরে চিড়িয়াখানার ডিরেক্ট বাস পেয়ে গেলাম।বাসে চড়েই আমাদের যাত্রা,মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব,প্রেসক্লাব থেকে ফার্মগেট,ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১,মিরপুর-১ থেকে আমাদের গন্তব্যস্থল চিড়িয়াখানা।
সময়টা দুপুর ছিলো একদিকে তীব্র গরম আরেকদিকে পেটে খুদা,পাশেই দেখলাম অনেক হোটেল আছে সেই হোটেল থেকেই পেটপূজা করে নিলাম।মেনুতে অনেক কিছুই ছিলো,মুরগী ও গরু ১০০ টাকা,ডিম ২০ টাকা,টাকার শর্টেজ কারনে আমরা ডিম ভাত আর ডাল খেলাম। বিল আসলো ৬০ টাকা মাত্র।পেটপূজার পর চলে গেলাম কাউন্টারে,২০ টাকা করে প্রতি টিকেট।দুটি টিকেট নিলাম আমার আর পরশের জন্যে।এরপর ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলাম চিত্রা হরিণ,হলুদ বাদামী মিশ্রণে তার দেহ পেটের দিক দিয়ে সাদা,বড় বড় শিং তবে সেটা শুধু ছেলে হরিণের ক্ষেত্রে,মেয়ে হরিণদের শিং নেই।এর পর দেখলাম কয়েকটা বড় বড় সাইনবোর্ড,প্রথম সাইনবোর্ডে দর্শনার্থীদের করনীয় দিকগুলো দেয়া ছিলো। আজকাল অনেক দর্শনার্থী যেখানেই যায় সেই পরিবেশটাকে নোংরা করে ফেলে তারা যেখানে সেখানে ময়লা,উচ্চস্বরে গান ইত্যাদি উচ্ছৃঙ্খল কাজকর্ম করে থাকে যার ফলপ্রসূতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।এসব কাজকর্ম সহ প্রাণীদের বিরক্ত না করা ও কোনো খাবার না দেয়া থেকে বিনীত অনুরধ করেছে।এর পরের সাইনবোর্ডে ছিলো বিভিন্ন প্রাণীদের লিস্ট ও বিবরণ।এর পরের বোর্ডে ছিলো কোথায় কোন প্রাণী অথবা পাখি আছে।আমরা একটু হেটেই দেখতে পেলাম রেসাস বানর এ বানরগুলো ধুসর রঙের ও মাঝারি সাইজের।এদের মধ্যে একটা পারিবারিক বন্ধন রয়েছে।এদের সবচেয়ে বড় বিশিষ্ট হল এরা একে অন্যের উকুন বেছে দেয়।এর পরে দেখলাম নানা জাতের বক,একেক বক একেক রকম,একেক রকমের চাল চলন,একেক রকমের গঠন, কিছু বকের অনেক লম্বা পা আবার কিছু বকের লাল ও বাঁকা ঠোঁট।আফ্রিকান বাঘের কাছে গিয়ে হতাশগ্রস্থ হলাম,বাঘ বাঘিনী দুজনই ঘুমাচ্ছিলো,এরপরে গেলাম আফ্রিকান ও ইন্ডিয়ান সিংহের কাছে তারাও ঘুমাচ্ছিলো।তবে যতটুকু তাদের দেখেছি তাতেই আমরা খুশি, এর ফাকে পরশ কিছু ছবি তুললো ও ভিডিও করে নিলো।সামনেই দেখতে পেলাম উটপাখি,বড় বড় পা,ইয়া বড় গলা,মাথা ছোট।তবে আজব ব্যাপার হল সে এক জায়গায়ই দাড়িয়ে ছিলো,একটুও নড়াচড়া করছিলোনা।এরপরে দেখতে পেলাম গাধা,এ গাধা গুলো আফগানিস্থান,ইন্ডিয়া,আফ্রিকা ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়,এরপরে দেখলাম এক অদ্ভুত প্রাণী যার নাম "ব্লাক ওয়াইল্ড বিস্ট" এটি ঘোড়া,গরু ও মহিষের সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে।এর পরে মুখোমুখি হলাম জলহস্তী,তখন তারা সবাই মিলে তাদের প্রিয় খাদ্য ঘাস খাচ্ছিল,এরা পানি ও ডাঙায় দুই জায়গায়ই থাকে।ময়ূর কথা তো ভুলেই গেছিলাম,আমরা দেখেছি সাদা ময়ূর যা খুবই বিচিত্র এর পরে আরো কিছু ময়ূরের জাত দেখলাম ,ছেলে ময়ূরের পাখা মেলা দৃশ্য খুবই মনোরম।আমরা সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম সাদা কাক দেখে,তার সাথে ছিলো ধূসর কাক।আমরা আরো কিছু প্রাণী দেখি যেমন কেশিয়ার, এর কালো শরীর ,লাল ও নীল মাথা ও ঠোঁট,এরা কেনিয়ার বাসিন্দা এর পরে দেখলাম উটপাখির মতই ইমু তবে এরা একটু ছোট এরা অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা,আমাদের গ্রাম বাংলায় আমরা ঘুঘু দেখেছি তবে সবুজ ঘুঘু অনেকেই দেখিনি তবে ওখানে সবুজ ঘুঘু দেখে আসলাম,এদের পাখা সবুজ হয় এরা পাহাড় ও বনজঙ্গলে থাকে।
এরপরে দেখলাম সবচেয়ে আকর্ষণীও ম্যাকাও, আপনারা যারা পাইরেটের মুভিগুলো দেখেছেন সেখানে দেখবেন তাদের একটা পাখি সারাদিন হাতে থাকে সেটিই হল এই পাখি এরা খুবই ফ্রেন্ডলি,ওখানে একটা সবুজ পাখি দূরে বসে ছিলো আমদের দেখেই কাছে এসে পরেছিলো আর ক্যামেরার সামনে পোছ মারা শুরু করে দিয়েছিলো।এদের ঠোঁট বাকা ,ধূসর বর্ণের ,অনেক শক্ত, সোনালী লাল সবুজ ও নানা রঙের মিশ্রণে এদের পালক,এরা মূলত ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড,আমেরিকা ও মেক্সিকো তে দেখা যায়।
এরপরে দেখলাম ওয়াটার বাক।এরা হরিণের মতই তবে এদের দেহ বৃহৎ,তবে পা ছোট।এরা আফ্রিকাতে থাকে। এরপর দেখলাম কালো ধনেশ,ভারত মায়ানমার নেপাল ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের বড় ঠোঁট,তবে শিরস্রনের জন্য এই ধনেশ জগতখ্যাত।এদের উপরের অংশ কালো ও তলপেট সাদা।এরা মূলত দলবদ্ধভাবে থাকে।এরপরে দেখলাম ঈগলের মত পাখি যাদের গলার স্বর কর্কশ এরা সুন্দরবন ও বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব এলাকায় বিদ্যমান।এরপরে দেখলাম বাংলার পরিচিত পাখি শঙ্খচিল।এদের দেখতে সাদা ও ইটের মত লালচে আমরা বাংলার অনেক কবিতায় এই পাখির নাম পেয়ে থাকি যেমন জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় লিখেছেন "আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে" এরপরে দেখতে পেলাম তিলাবাজ যার গাড় বাদামী পালক,আরো দেখেছি গন্ডার।এদের বিরাট সরু সিং নাকের উপর,বিসাল লালচে দেহ ও শক্ত চামড়ার দেহ।একবার শুনেছিলাম এদের গায়ে কেউ মারলে নাকি তারা ৩০ দিন পর টের পায়।হাঁটতে হাঁটতে আরও চোখে পড়লো জিরাফ ও জেব্রা এরপরে হাতি সাপ ও সবশেষে কুমির।আমাদের জাতীয় পশু আমাদের বাঘ মামার কথা তো ভুলেই গেছিলাম।রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের খাঁচার সামনে যাওয়াতেই দেখি মামা গর্জন দিয়ে উঠেছে,যেমন বড় তেমন হিংশ্র,ডোরাকাটা কালো দাগই একে অন্য বাঘ থেকে আলাদা করেছে যা শুধু আমাদের সুন্দরবনেই পাওয়া যায়।দিন দিন এই বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।কিছুদিন আগে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দেশে আর মাত্র ১০৫ টি বাঘ ও ভারতের সুন্দরবনের অংশে ৭৩ টি বাঘ আছে।আমাদের উচিত আমাদের জাতীয় পশুকে বাঁচানো।
চিড়িয়াখানা ঘুরতে ঘুরতে কখন যে এক্সিট পয়েন্টে এসে পরলাম বুঝতেই পারিনি।
আমাদের এ ভ্রমণ হল আপনাদের পরিবেশ,পশু সম্পর্কে সচেতন ও ইনফরমেশন জানানোর জন্যেই।আপনারা যদি প্রকৃতিকে রক্ষা করেন তাহলে প্রকৃতিই আপনাকে রক্ষা করবে যেমন করেছিলো ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডরে। পরবর্তীতে আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো বাংলার অন্য কোনো পথে।
আসুন পরিবেশ বাঁচাই,নিজেদের বাঁচাই :)
নীচে চিড়িয়াখানার কিছু স্থির চিত্র দেয়া হল।
ছবি তুলেছেনঃআরসাদ খান পরশ
১। চিত্রা হরিণ
২।কিছু নিয়মাবলী
৩।এক নজরে কিছু তথ্য
৫।রেসাস বানরদের কিছু মুহূর্ত
৬।গোল্ডেন বক
৭।রয়্যাল বেঙ্গল(ঘুমিয়ে রয়েছে)
৮।সাদা ময়ূর
৯।কেশিয়ার
১০।ময়ূর
১১।ইমু
১২। ময়ূর
১৩।ম্যাকাও
১৪।ম্যাকাও
১৫।ম্যাকাও
১৬।ব্লাক ওয়াইল্ড বিস্ট
১৭।গাধা
১৮।ওয়াটার বাক
১৯।ধনেশ
২০। শঙ্খচিল
২১।তুরাগ নদী
২২।জলহস্তি
২৩,কুমির
২৪।কুমির
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন